পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পর অঞ্চল দু’টির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীকেও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটি।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

এ ছাড়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাতিসংঘ ও সামরিক জোট ন্যাটো।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে রাশিয়া ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলে যেকোনো ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ, ব্যবসা বা অন্য কোনো ধরনের লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেউ এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে তাকেও কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইউক্রেনের দু’টি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের রুশ স্বীকৃতির বিষয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে আধাঘণ্টা টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এই তিন পশ্চিমা নেতা প্রেসিডেন্ট পুতিনের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান এবং এ ব্যাপারে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করেন।

এদিকে একজন মার্কিন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মঙ্গলবার আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তিনি দাবি করেন, ওয়াশিংটন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে ‘কঠোর’ নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এগুলো তা নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সোমবার রাতের ভাষণকে ‘আসন্ন যুদ্ধের ব্যাখ্যা’ আখ্যায়িত করে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ট্যাংকগুলো চলতে শুরু না করছে ততক্ষণ ওয়াশিংটন কূটনীতির পথে হাঁটা অব্যাহত রাখবে। এর আগে পশ্চিমা দেশগুলো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, সংস্থার সদস্য দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে জবাব দেবে।

এ ছাড়া সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের পদক্ষেপকে ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে পূর্ব ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তিকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে ফেলবে।

উল্লেখ্য, সোমবার সিকিউরিটি কাউন্সিলের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে পুতিন সিদ্ধান্ত নেন দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করা হবে। রুশ সংবাদ সংস্থার সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আপনাদের সবার মতামত জানলাম। আজই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

পরে এক বিবৃতিতে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন জানায়, পূর্ব ইউক্রেনের দুই রুশপন্থি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করতে পারেন পুতিন। অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশ দেবেন তিনি। আবার বার্তাসংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তের কথা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে জানিয়েছেন পুতিন। কিন্তু টেলিফোন কথোপকথনে দুই দেশের প্রধানই (পুতিনের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে) অসম্মতি প্রকাশ করেছেন।

আর এর মধ্যেই ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করেন পুতিন। দীর্ঘ ভাষণের পর পুতিন রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষকে এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে বলেন।

পাশাপাশি, ইউক্রেনে রুশপন্থিদের বিরুদ্ধে সরকারের সামরিক অভিযান বন্ধ করার কথা বলে পুতিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, রক্তপাতের দায় সম্পূর্ণ ভাবে বর্তাবে ইউক্রেনের ক্ষমতায় থাকা সরকারের ওপরে। আধুনিক ইউক্রেনের সম্পূর্ণ রূপকার শুধু রাশিয়াই।’